টসটসে রসালো। দেখতে আকর্ষণীয়। খেতেও মজাদার। বলছি পার্বত্যাঞ্চলের আম, কাঠাঁল, লিচু ও আনারসসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফলের কথা। তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে এবারও মিশ্র মৌসুমি ফলের বাম্পার ফলন হয়েছে। মিশ্র ফলের রসালো গন্ধ সুবাস ছড়াচ্ছে পাহাড়ি জনপদে। এখন টস কাঁচা-পাকা ফলে ভরপুর পাহাড়ে হাট বাজার। আম, কাঁঠাল, লিচু আর আনারসের সয়লাব পাহাড় জুড়ে। প্রতিদিন বসছে এসব মৌসুমি ফলের হাট। এতে ক্রোদের আকর্ষণ যেমন বেশি, তেমনি লাভবান হচ্ছেন বিক্রেতারা। দামও সাধ্যের মধ্যে। পার্বত্যাঞ্চলের গণ্ডি পেরিয়ে এসব বাহারি ফল বাজারজাত হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। রপ্তানির সাথে আয়ও বাড়ছে কৃষকদের। শুধু হাট বাজারে নয়, অনলাইনও ব্যবসা জমে উঠেছে এসব মৌসুমি ফলের।
রাঙামাটি জেলা কৃষি তথ্য সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য সূত্রে জানা গেছে, উপযুক্ত আবহাওয়ার কারণে পার্বত্যাঞ্চল অর্থাৎ তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের আম, কাঁঠাল, আনারস, লিচুর প্রচুর ফলন এসেছে। তার মধ্যে রাঙামাটি জেলা সদর, নানিয়ারচর, বিলাইছড়ি, কাপ্তাই, কাউখালী, বরকল, জুরাছড়ি, লংগদু, বাঘাইছড়ি, রাজস্থলী উপজেলাসহ বিভিন্ন জায়গায় এসব মিশ্র ফলের বাগান রয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে।
কৃষি বিভাগের পরিসংখ্যানের মতে, রাঙামাটি জেলায় মিশ্র ফলের আবাদ হয়েছে ৩৫ হাজার ৫৬৫ হেক্টর জমিতে। যা গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ। তার মধ্যে আমের বাগান রয়েছে হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে। এসব বাগানে এবার প্রায় ৯.৮ মেট্রিক টন আমের উৎপাদন হয়েছে। তার মধ্যে রেগুয়াই ও আম্রপালির বাম্পার ফলন হয়েছে। এছাড়া পাহাড়ে ফলন ভালো হওয়ায় দেশি জাতের পরিবর্তে এখন অধিক চাষাবাদ হচ্ছে চায়না-২, চায়না-৩ জাতের লিচুর। বোম্বে লিচুর ফলনও হচ্ছে উচ্চ পরিমাণে। শুধু রাঙামাটি জেলায় লিচুর বাগান রয়েছে এক হাজার ৮৮২ হেক্টর জমিতে। চলতি বছর লিচুর উৎপাদন হয়েছে ৯.৫০ মেট্রিক টন। একই সাথে আনারস-৪ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়েছে ২৯.২মেট্রিক টন। আর কাঁঠাল আবাদ হয়েছে ১০ হাজার ৮৬৩ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছে প্রায় ২ লাখ মেট্রিক টন।রাঙামাটির স্থানীয় মৌসুমি ফল ব্যবসায়ী সাধন চাকমা জানান, মৌসুমি ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে দাম একটু কম। তবে লাভও অনেক। আনারসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ইতিমধ্যে বাজারে এসেছে- আম, কাঠাঁল, লিচু। কিন্তু পাকা ফল সংরক্ষণ করা খুব কঠিন। হিমাগার না থাকার কারণে পচে নষ্ট হচ্ছে হাজার হাজর ফল।
একই কথা জানালেন আরেক মিশ্র ফল বাগানি সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা । তিনি বলেন, রাঙামাটি সদর উপজেলার মগবান ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের সোনা রাম কাউরি পাড়া এলাকায় প্রায় ১৫ একর হেক্টর জমিতে মিশ্র ফলের বাগান করেছেন তিনি। ফলও হয়েছে বাম্পার। তবে কৃষকদের চাহিদামতো মিলছে দাম। অধিক লাভের আশায় কম দামে ফল কিনতে চায় ব্যাপারীরা।
রাঙামাটি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক তপন কুমার পাল জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাঙামাটির বিভিন্ন মৌসুমি ফলের ব্যাপক চাষাবাদ হচ্ছে। ফলনও হচ্ছে লক্ষ্যমাত্রার অধিক। বিশেষ করে উন্নত চাষাবাদের কারণে পাহাড়ে সব মৌসুমে যে কোনো মৌসুমি ফল পাওয়া যায় এ পার্বত্যাঞ্চলে। এজন্য পাহাড়কে এখন মৌসুমি ফলের দেশ বলা হচ্ছে। কৃষকরা যদি আরও একটু সচেতন হয় তাহলে এসব ফল উৎপাদনের ধারা ধরে রাখা সম্ভব হবে। তবে এ সম্ভাবনাময় কৃষি খাতকে উন্নয়নশীল করতে পার্বত্যাঞ্চলে মৌসুমি ফল সংরক্ষণ ও কৃষকদের সার্থে হিমাগার স্থাপন খুবই প্রয়োজন।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন
No comments:
Post a Comment